আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম মুন্সিরবাজার এলাকার সত্তরোর্ধ্ব রহিমা বেগম মুক্তিযুদ্ধে স্বামীকে হারিয়েছে। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। কোনো ছেলেই তার খবর নেয় না । ফলে রহিমা বৃদ্ধা বয়সে কখনো মানুষের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ, কখনো আবার কারো কাছে সাহায‌্য নিয়েই চলে তার জীবন। ভাঙ্গা একটি ঝুপড়িতে বৃদ্ধা রহিমার বসবাস। সেই ঝুপড়ির উপরের দিকে তাকালেই সুর্যের আলো দেখা যায়। জরাজীর্ন ঝুঁপড়িতে আর ভাঙ্গা বিছানায় মানবেতর জীবনযাপন তার। গ্রামের অসহায় নারীদের তালিকায় রহিমার নাম তাই সবার মুখে মুখে।

পৃথিবীতে তাকে দেখাশোনার জন্য কেউ নেই বললেই চলে। কিন্তু তার জীবনে সুখ আর ধরা দিলো না। এখন তিনি বয়সের ভারে ন্যুয়ে পরেছেন। কমে গেছে দৃষ্টি শক্তি। জীবনের শেষ সময়ে এসেও তাকে প্রতিটি রাত দিন আতঙ্কে কাটাতে হচ্ছে। তিনি সবসময় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন এই বুঝি বৃষ্টি এলো, বাতাস এলো! বৃষ্টি এলে ঝুঁপড়িতে থাকবেন কি ভাবে, আশ্রয় নিবেন কোথায়, কে বা দিবে তাকে আশ্রয়। বৃষ্টিতে তার আরো একটা ভয় মনে কাজ করে। এই বুঝি ঘরে পোঁকামাকড় আসলো, এই বুঝি তাকে কামড় দিলো। কিন্তু তিনি নিরুপায়! করার যে তার কিছুই নেই!

একটি সরকারি ঘরের আকুতি জানিয়ে বৃদ্ধা রহিমা বলেন, মোর কাও নাই। শ্যাষ বয়সে একনা থাকির ব্যবস্থা করি দেন ব্যাহে । একনা ঘরের ব্যবস্থা করি দিলে শ্যাষ কয়টা দিন একনা শান্তিত থাকির পাইম। অনেকে সরকারি ঘর পেয়েছে আপনি কেন পেলেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৮ মাস আগোত টিএনও,পিআইও মোক ঘর দিবার চাইছে আইজো দেয় নাই ব্যাহে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী বৃদ্ধা রহিমার কষ্ট আর ভোগান্তিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তার বাকি জীবনটা স্বস্তিতে কাটানোর জন্য একটা ঘরের খুব প্রয়োজন। না হলে আসছে শীতে তার কষ্টের সীমা থাকবে না। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আঃ মান্নান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বৃদ্ধা রহিমার খোঁজ নিতে বলেন ও তার খোঁজ খবর করে ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে বলেন কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ৮ মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি, কথা রাখেনি পিআইও ইউএনও!

খোঁজ খবর নিতে গিয়ে তিন দিনের মধ্যে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেন। রহিমার ঝুঁপড়ির পাশেই সোনাবি ও জিয়ারুল নামের দুইজন ঘর পেলেও আজ ৮ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও রহিমার ভাগ্যে জুটেনি সরকারি বরাদ্দের ঘর।